Skip to main content
 

মানিকগঞ্জ জেলার বিচার বিভাগীয় ইতিহাস

 

লোক সংগীত ও হাজারি গুড়ের দেশ কিংবা ভাষা শহীদ রফিক, নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন এর জেলা মানিকগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ঢাকা বিভাগে অবস্থিত। ১৮৪৫ সালের মে মাসে এটি মানিকগঞ্জ মহকুমা নামে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এই মহকুমা প্রথম ফরিদপুর জেলার অধীন ছিল। পরবর্তীতে ১৮৫৬ সালে মানিকগঞ্জ মহকুমাকে ঢাকা জেলার অন্তর্ভূক্ত করা হয় এবং ১৯৮৪ সালের ১ লা মার্চ মানিকগঞ্জ কে জেলায় উন্নীত করা হয়। মানিকগঞ্জ নামের উৎপত্তি সর্ম্পকীয় ইতিহাস আজও রহস্যাবৃত । ১৮৪৫ সাল মহুকুমা সৃষ্টির আগে কোন ঐতিহাসিক বিবরণে বা সরকারি নথিপত্রে মানিকগঞ্জ এর নাম পাওয়া যায়নি। তবে জনশ্রুতি রয়েছে যে অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধে মানিক শাহ নামক এক সুফি দরবেশ সিংগাইর উপজেলার মানিকনগর গ্রামে আগমন করেন এবং তাঁর নামেই মানিকগঞ্জ জেলার নামকরণ হয়েছে।

মানিকগঞ্জ বিচার বিভাগের ইতিহাস প্রশাসনিক কাঠামোর সাথে সম্পৃক্ত। মহাকুমা বৃটিশ এবং পাকিস্তান আমলে পূর্বে মানিকগঞ্জে শুধু মুনসেফ আদালত বিদ্যমান ছিল। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সাল মানিকগঞ্জ জেলার জেলা জজ আদালতের কার্‍্যক্রম চলমান আছে।  পরবর্তীতে ঐতিহাসিক পহেলা নভেম্বর ২০০৭ সালে বিচারবিভাগ পৃথকীকরণ হলে মানিকগঞ্জ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়৷  বর্তমানে মানিকগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জেলা ও দায়রা জজ হিসাবে জনাব জয়শ্রী সমদ্দার এবং চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে জনাব উৎপল ভট্টাচার্য্য কর্মরত আছেন।

বর্তমানে মানিকগঞ্জ জেলায় একটি জেলা ও দায়রা জজ আদালত, একটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, দুটি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত, দুটি যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত, সাতটি উপজেলায় সাতটি সহকারী জজ সিনিয়র সহকারী জজ আদালত, একটি লিগ্যাল এইড অফিস অবস্থিত। এছাড়া, ম্যাজিস্ট্রেসীর পরিচালনার জন্য একটি চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, একটি অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত রয়েছে।

এছাড়া, মানিকগঞ্জ জেলায় একটি লিগ্যাল এইড অফিস রয়েছে। এখানে দুস্থ দরিদ্র মানুষকে বিনা খরচে আইনী সেবা প্রদান, বিরোধ নিষ্পত্তিসহ আইনী পরামর্শ প্রদান করা হয়ে থাকে। অধিকন্তু মানিকগঞ্জ জেলা জজ আদালতে একটি মার্তৃ দুগ্ধ কর্নার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

মানিকগঞ্জ জেলা থেকে আইনাঙ্গনের অনেক উজ্জ্বল নক্ষত্র রয়েছেন। মানিকগঞ্জের যে মাণিক রাষ্ট্রযন্ত্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন তাঁর নাম বিচারপতি এ.কে.এম নূরুল ইসলাম। তিনি ১৯২৫ সালে মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর থানার পূর্ব খলিলপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তদানীন্তন ঢাকা হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে ১৯৬৮ সালে  শপথ গ্রহণ করেন এবং ১৯৭০ সালে স্থায়ী বিচারপতি নিযুক্ত হন। বিচারপতি এ. কে. এম নূরুল ইসলাম ১৯৭৭ সালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং ১৯৮২ সালে দ্বিতীয় বারের মত উক্ত পদে নিযুক্ত হন।  তিনি মানিকগঞ্জ-২ নির্বাচনী এলাকা থেকে ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালের ৩০শে নভেম্বর তিনি বাংলাদেশের উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তিনি আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া, এই জেলার জেলা ও দায়রা জজ এবং চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে কর্মরত বিচারকদের মধ্যে মাননীয় বিচারপতি খন্দকার মুসা খালেদ, মাননীয় বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ, মাননীয় বিচারপতি আতাবুল্লা উচ্চ আদালতে বিচারপতি হিসাবে দ্যূতি ছড়িয়েছেন।

আইন ও মানবাধিকার সংরক্ষণে বিচার বিভাগ, মানিকগঞ্জের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ এবং সাংবাদিক মিশুক মনির সড়ক দূর্ঘটনার মামলা, চাঞ্চল্যকর অনেক হত্যা মামলা, পারিবারিক ও দেওয়ানী অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা নিস্পত্তি করে মানিকগঞ্জ জেলা জজ আদালত বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে উদাহরণ সৃষ্টি করে আছে এবং ভবিষ্যতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার লক্ষ্যে মানিকগঞ্জের বিজ্ঞ বিচারকগণ নিরলসভাবে কাজ করছেন।   (চলমান...)